সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত ভূমিকা
জেফরি ডি স্যাকস : সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এ মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক সংকট। সেই ২০১১ সালে সংকটের শুরুর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ সেখানে মারা গেছে, প্রায় এক কোটি সিরীয় নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদিকে ইউরোপ আইএসের সন্ত্রাসের কারণে শঙ্কিত হয়েছে, শরণার্থীর স্রোতে দিশাহারা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সহযোগীরা একাধিকবার মারাত্মকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রসঙ্গটি মার্কিন জনগণ ও বৈশ্বিক নাগরিক ফোরামের কাছ থেকে আড়াল করে সমস্যাটি জটিলতর করে তুলেছেন। সিরিয়া যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে তার গোপন ভূমিকার কথা স্বীকার করতে হবে, অর্থাৎ বিভিন্ন পক্ষকে কারা টাকা, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তা খোলাসা করতে হবে। এসব খোলাসা করা হলে অন্যান্য দেশের বেপরোয়া ভূমিকার অবসান ঘটবে।
ওবামা যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়া যুদ্ধ থেকে দূরে রেখেছেন—এ রকম একটা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। সত্য হচ্ছে, মার্কিন ডানপন্থীরা নিয়মিতভাবে ওবামার সমালোচনা করে কেন, জানেন? কারণ, তিনি আসাদকে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রশ্নে একটা সীমারেখা দিয়েছিলেন, কিন্তু আসাদ তা অতিক্রম করলে তিনি নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। সিরিয়ার অনেক কিছুর মতো এটিও তমশাচ্ছন্ন। তবে প্রায়ই পর্দা উন্মোচিত হচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক টাইমস–এ ২০১১ সালের রাষ্ট্রপতির এক গোপন আদেশের সংবাদ ছাপা হয়, যেখানে তিনি সিআইএকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের যেন অস্ত্র দেওয়া হয়। ওই সংবাদে জানানো হয়, সৌদি আরব অস্ত্রের সিংহভাগ টাকা সরবরাহ করে, আর সিআইএ ওবামার নির্দেশে সাংগঠনিক সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছে।
এটাও দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার যে, মার্কিন সরকার ওই সংবাদের কোনো প্রতিক্রিয়া যেমন জানায়নি, তেমনি নিউইয়র্ক টাইমসও তার কোনো ফলোআপ করেনি। মানুষ একরকম অন্ধকারের মধ্যে ছিল: সৌদি সিআইএর এই অভিযানের ব্যাপ্তি কতটা? যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার যুদ্ধে প্রতিবছর কত অর্থ ব্যয় করছে? যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার ও অন্যরা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কোন ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করছে? কোন কোন গোষ্ঠী এই অস্ত্র পাচ্ছে? মার্কিন সরকার, বিমান হামলা ও অন্য ব্যক্তিদের ভূমিকা কী? মার্কিন সরকার এসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। মূলধারার গণমাধ্যমেও এসব নিয়ে সংবাদ ছাপা হচ্ছে না।
অন্তত কয়েক ডজন বার এমন হয়েছে যে ওবামা মার্কিন জনগণকে বলেছেন, ‘মার্কিন সেনার বুট মাটিতে পড়বে না।’ তা সত্ত্বেও কয়েক মাস পরপর সরকারের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে মানুষকে জানানো হয়েছে, বিশেষ সেনাদের সিরিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে। ওদিকে পেন্টাগন তো নিয়মিত বলেই যাচ্ছে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে নেই। কিন্তু সম্প্রতি আসাদ সরকার ও রাশিয়া যখন সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ক্রেমলিনকে জানায়, এই আক্রমণে মার্কিন স্থলসেনারা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই অভিযানের কোনো ব্যাখ্যা মানুষকে দেওয়া হয়নি, কার বিরুদ্ধে তাদের অভিযান, এর ব্যয় কত—কিছুই মানুষকে জানানো হয়নি।
মাঝেমধ্যে নানা তথ্য ফাঁস হয়, তার সঙ্গে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরল বিবৃতি মারফত আমরা জানতে পারছি, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সিআইএর নেতৃত্বে এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, যার লক্ষ্য একই সঙ্গে আসাদকে উৎখাত ও আইএসকে হটানো। আসাদবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতারসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য শক্তি। যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহীদের জন্য অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, বিশেষ বাহিনী, বিমান হামলা ও উপকরণগত সহায়তা বাবদ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ভাড়াটে সেনা। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য ক্ষেত্রেও শত শত কোটি ডলার ব্যয় করছে। এ লক্ষ্যে তারা কত টাকা ব্যয় করছে, সেটার সঠিক হিসাব জানা যায় না। এসব ব্যাপারে মার্কিন জনগণের বক্তব্য নেই। মার্কিন কংগ্রেস এর বাজেট অনুমোদন করে না বা এ ব্যাপারে ভোট দেয় না। সিআইএর ভূমিকা কখনোই ব্যাখ্যা করা হয়নি, তার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করা হয়নি। মার্কিন কর্মকাণ্ডের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বৈধতা মার্কিন জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে কখনোই দেওয়া হয়নি।
মার্কিন সামরিক–শিল্প কমপ্লেক্সের একদম কেন্দ্রে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মনে করেন, এই গোপনীয়তা এভাবেই বজায় রাখা উচিত। তাঁদের এই অবস্থানের কারণ হচ্ছে, ১৫ বছর আগে কংগ্রেসের এক ভোটে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে ৯/১১–এর ঘটনার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় গোপন যুদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। তাহলে তাকে আর জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন, তারা কী করছে? এতে অভিযান ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর শত্রুপক্ষ শক্তিশালী হবে। মানুষের এসব জানার দরকার নেই।
আমার মতটা ভিন্ন: যুদ্ধ হচ্ছে শেষ উপায়, যাকে আবার গণতন্ত্রের চোখে নিরীক্ষা করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মাজেজা হচ্ছে, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ মার্কিন সংবিধান ও জাতিসংঘের সনদ উভয়ের আলোকেই অবৈধ। আর সিরিয়ায় তার এই দ্বিমুখী যুদ্ধ একই সঙ্গে বেপরোয়া ও বিপজ্জনক জুয়াখেলার মতো। যুক্তরাষ্ট্র যে আসাদকে উৎখাতের চেষ্টা করছে, তার লক্ষ্য কিন্তু সিরীয় জনগণকে রক্ষা করা নয়, যেটা ক্লিনটন ও ওবামা মাঝেমধ্যে বলে থাকেন। আসলে এটা রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্সি যুদ্ধ, যেখানে সিরিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
মার্কিন জনগণ নিরাপত্তা চায়। কিন্তু তারা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষমতার পটপরিবর্তন করানোর যুদ্ধ চায় না। কারণ, তাদের মনে আছে, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এ কাজ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কী বিপর্যয় বরণ করতে হয়েছিল। সে কারণেই মার্কিন নিরাপত্তা গোষ্ঠী সত্য বলাকে অস্বীকৃতি জানায়। ওবামার হাতে সময় বেশি নেই। ফলে তিনি যদি নিজের ভঙ্গুর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চান, তাহলে তাঁকে মার্কিন জনগণের কাতারে আসতে হবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট।
জেফরি ডি স্যাকস: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়নের অধ্যাপক।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
অ্যান্ড্রয়েড নোগেটে যুক্ত নতুন ফিচারগুলো…
অ্যাপল ও পেয়ারা দুটোই পুষ্টিতে ভরপুর !
শহীদ কাদরী’র কিছু কবিতা
বৃষ্টি, বৃষ্টি
সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর–ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটলো, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মত যেন বা মড়কে
শহর উজাড় হবে,– বলে গেল কেউ– শহরের
পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায়
এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম!
বজ্র–শিলাসহ বৃষ্টি, বৃষ্টি : শ্রুতিকে বধির ক’রে
গর্জে ওঠে যেন অবিরল করাত–কলের চাকা,
লক্ষ লেদ–মেশিনের আর্ত অফুরন্ত আবর্তন!
নামলো সন্ধ্যার সঙ্গে অপ্রসন্ন বিপন্ন বিদ্যুৎ
মেঘ, জল, হাওয়া,–
হাওয়া, ময়ূরের মতো তার বর্ণালী চিৎকার,
কী বিপদগ্রস্ত ঘর–দোর,
ডানা মেলে দিতে চায় জানালা–কপাট
নড়ে ওঠে টিরোনসিরসের মতন যেন প্রাচীন এ–বাড়ি!
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জনারণ্য, শহরের জানু
আর চকচকে ঝলমলে বেসামাল এভিনিউ
এই সাঁঝে, প্রলয় হাওয়ার এই সাঁঝে
(হাওয়া যেন ইস্রাফিলের ওঁ)
বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা,
ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নীচু
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে,– জল
অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র, হিংস্র
খল,
আর ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায় শোনে
ক্রন্দন, ক্রন্দন
নিজস্ব হৃৎপিণ্ডে আর অদ্ভুত উড়োনচণ্ডী এই
বর্ষার ঊষর বন্দনায়
রাজত্ব, রাজত্ব শুধু আজ রাতে, রাজপথে–পথে
বাউণ্ডুলে আর লক্ষ্মীছাড়াদের, উন্মূল, উদ্বাস্তু
বালকের, আজীবন ভিক্ষুকের, চোর আর অর্ধ–উন্মাদের
বৃষ্টিতে রাজত্ব আজ। রাজস্ব আদায় করে যারা,
চিরকাল গুণে নিয়ে যায়, তারা সব অসহায়
পালিয়েছে ভয়ে।
বন্দনা ধরেছে,– গান গাইছে সহর্ষে
উৎফুল্ল আঁধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড,
বাৎকা–চোরা টেলিফোন–পোল, দোল খাচ্ছে ওই উঁচু
শিখরে আসীন, উড়ে–আসা বুড়োসুড়ো পুরোন সাইনবোর্ড
তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি
কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা,
পালিয়েছে ভয়ে।
পালিয়েছে, মহাজ্ঞানী, মহাজন, মোসাহেবসহ
অন্তর্হিত,
বৃষ্টির বিপুল জলে ভ্রমণ–পথের চিহ্ন
ধুয়ে গেছে, মুছে গেছে
কেবল করুণ ক’টা
বিমর্ষ স্মৃতির ভার নিয়ে সহর্ষে সদলবলে
বয়ে চলে জল পৌরসমিতির মিছিলের মতো
নর্দমার ফোয়ারার দিকে,–
ভেসে যায় ঘুঙুরের মতো বেজে সিগারেট–টিন
ভাঙা কাচ, সন্ধ্যার পত্রিকা আর রঙিন বেলুন
মসৃণ সিল্কের স্কার্ফ, ছেঁড়া তার, খাম, নীল চিঠি
লন্ড্রির হলুদ বিল, প্রেসক্রিপশন, শাদা বাক্সে ওষুধের
সৌখীন শার্টের ছিন্ন বোতাম ইত্যাদি সভ্যতার
ভবিতব্যহীন নানাস্মৃতি আর রঙবেরঙের দিনগুলি
এইক্ষণে আঁধার শহরে প্রভু, বর্ষায়, বিদ্যুতে
নগ্নপায়ে ছেৎড়া পাৎলুনে একাকী
হাওয়ায় পালের মতো শার্টের ভেতরে
ঝকঝকে, সদ্য, নতুন নৌকার মতো একমাত্র আমি,
আমার নিঃসঙ্গে তথা বিপর্যস্ত রক্তেমাংসে
নূহের উদ্দাম রাগী গরগরে গলা আত্মা জ্বলে
কিন্তু সাড়া নেই জনপ্রাণীর অথচ
জলোচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসের স্বর, বাতাসে চিৎকার,
কোন আগ্রহে সম্পন্ন হয়ে, কোন শহরের দিকে
জলের আহ্লাদে আমি একা ভেসে যাবো?
বোধ
শালিক নাচে টেলিগ্রাফের তারে,
কাঁঠালগাছের হাতের মাপের পাতা
পুকুর পাড়ে ঝোপের ওপর আলোর হেলাফেলা
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?
মহাশ্বেতা মেঘের ধারে–ধারে
আকাশ আপন ইন্দ্রনীলের ঝলক পাঠায় কাকে?
ছাদে–ছাদে বাতাস ভাঙে রাঙা বৌ–এর খোঁপা
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?
শিউলি কবে ঝরেছিল কাদের আঙিনায়
নওল–কিশোর ছেলেবেলার গন্ধ মনে আছে?
তরুণ হাতের বিলি করা নিষিদ্ধ সব ইস্তেহারের মত
ব্যতিব্যস্ত মস্তো শহর জুড়ে
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?
সঙ্গতি
(অমিয় চক্রবর্তী, শ্রদ্ধাস্পদেষু)
বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক–ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত–কথা ফিরবে তোমার স্বরে
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক–ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
ব্যারাকে–ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের– তোমরা দু‘জন একঘরে পাবে ঠাঁই
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক–ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না
একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,
রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো
হেলায়–ফেলায় পড়ে থাকে
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;
কবরের রন্ধ্রে–রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,
মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে
একটা সবুজ টিয়ে,
ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে
হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির
এবং পাখির প্রস্রাব;
সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে
পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে
একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়
সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে
বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার
প্রথম সহজ রঙ হেলায়–ফেলায়
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না
স্মৃতি : কৈশোরিক
অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন
রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর
যেন তার নৌকা– দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম
ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর
যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা
জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে
অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,
গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নত্ররাজি,
তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ,- চলে গেছি
শব্দহীন ঠাকুরমার ঝুলির ভেতর।
দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়–পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের
সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়
মাংস, মাংস, মাংস…
আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ
কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়
ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়
সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।
শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,
দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে
বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা
তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ–
রূপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়,
মাংস, মাংস, মাংস… মাংসের ভেতরে শুধু
দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন
খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি…