আর্কাইভ

Archive for মার্চ, 2018

মিডিয়া বা চলচ্চিত্রের মানুষের প্রতি হ্যাপির আহ্বান

happy amatullahবর্তমানে যারা মিডিয়াতে/চলচ্চিত্রে কাজ করছেন বা যারা করতে চাচ্ছেন এই লেখাটা তাদের জন্য।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। দুনিয়ার যত মুসলিম বোন আছে সবাইকে আমি নিজের বোনই মনে করি। আমার বোন যখন ভুল কিছু করবে বা করতে চাইবে আমি নিশ্চয় তাকে হাসিমুখে সেই অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারবো না। আমার বলাটা তো আমাকে বলতেই হবে। শোনা না শোনা, মানা না মানা এটা তো যার যার বিষয়। কেউ ইচ্ছা করে আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইলে আমি আটকাতে তো পারব না। এটা বলতে পারবো শুধু, এই আগুণ ধংস করে দেবে, সহ্য করা যাবে না। তবুও জেনেশুনে কেউ ঝাঁপ দিলে সেটা তার জিম্মাদারি।

কোরআনে নারীদের জন্য আলাদা একটি সূরা “আন নিসা”! আল্লাহু আকবার! কত বড় সম্মান! নারীর যে সম্মান ইসলামে আছে যা আর কোনো ধর্মে নেই। নারীরা খুব দামী। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল তা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন।সুবাহানআল্লাহ!

আর আমরা আজকে বেপর্দা হয়ে সম্মান অর্জন করার চেষ্টা করছি।মিথ্যা সম্মানের পেছনে ছুটে মরছি।একটু চিন্তা করি, ধরলাম আমি/আপনি অনেক বড় নায়িকা হলাম, চলচিত্রে সর্বোচ্চ সম্মান অস্কার পেলাম। প্রচুর টাকা হলো।সারা পৃথিবীর মানুষের (মুমিনদের কাছে না) কাছে আইডল হলাম। আমাকে/আপনাকে এক পলক দেখার জন্য জীবন দিতেও রাজি অনেকে। প্রচুর ক্ষমতা হলো।এবং কোনো না কোনো দিন মরে গেলাম। তারপর?

ভাবতে পারেন? অন্ধকার কবরটাতে কেউ একটা লাইট জ্বালানোরও ক্ষমতা রাখে না। এত দামী দামী পোশাক পরতেন আপনি, সেই আপনার পোশাক হবে শুধু সাদা কাফনের কাপড়। কোথায় যাবে সম্মান? কোথায় থাকবে ক্যারিয়ার? কোথায় থাকবে হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি ভক্তরা? তারা কি আপনাকে আজাব থেকে বাঁচাতে পারবে?

হযরত আবু সাইদ খুদুরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, অবশ্যই নাফরমান অর্থাৎ (বে নামাজি, বেপর্দা) নারীদের জন্য কবরে ৯৯ টি বিষাক্ত সর্প (সাপ) নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো তাকে কেয়ামত পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে।যদি তাদের মধ্যে হতে কোন একটি সাপও পৃথিবীতে নিঃশ্বাস ফেলতো তাহলে জমিনে কোনো সবুজ তৃণলতা বা উদ্ভিদ জন্ম নিত না।(দারেমী) আর ইমাম তিরমিযী ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন তবে ৯৯ এর স্থলে ৭০ এর কথা বলেছেন। (মেশকাত, হাদীস নং ১২৬)

আর জাহান্নামের কঠোর শাস্তি তো আছেই। পর্দা করাকে আমরা অমর্যাদা মনে করি। আফসোস! আমরা কোনো দামী জিনিস রাস্তাঘাটে খোলামেলা ভাবে নিয়ে চলি? দামী দামী গহনার জায়গা কেন তালাবদ্ধ আলমারি হয়? কেন শোপিস করে রাখি না? কেন? উত্তর নিজেরা খুঁজে দেখি। আমরা তো অনেক বেশি দামী কোনো জিনিসের সাথেও তুলনা করার মত না।আজ অবস্থা এমন যে এসবের সাথেও উদাহরণ টানতে হয়! আমরা নিজেরা নিজেদের এই অবস্থায় টেনে এনেছি।

আমরা একটা সাপ দেখলেই ভয়ে শেষ হয়ে যাই।সেই সাপের সৃষ্টিকর্তাকে ভয় পাই না? আমরা লিফটে কিছুক্ষণ আটকে থাকলে আমাদের অবস্থা কি হবে তা আল্লাহ জানেন।আর কবর কেমন হবে? নিশ্চিত কেউ সেখানে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। একমাত্র আমল ছাড়া।

আমরা নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করি, আল্লাহ বলেছেন ঢেকে রাখতে! আমরা প্রেম (হারাম প্রেমকেও জিনা বলা হয়েছে, শারীরিক সম্পর্ক হোক বা না হোক) করি, আল্লাহ বলেছেন জ্বিনা না করতে! আমরা পুরুষদের মত পোশাক পরি, আল্লাহ বলেছেন আমরা যেন পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণ না করি! আমরা সকালে নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে থাকি, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আরও অসংখ্য জিনিস আছে।আমরা প্রতিনিয়ত আল্লাহর অবাধ্যতা করছি। সীমালঙ্ঘন করে যাচ্ছি।

এই দুনিয়ায় কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে পারবে না।আমিও না আপনিও না। যে দুনিয়া আমাদের জন্য অনন্তকাল বসবাসের জায়গা সেই জায়গার জন্য কি প্রস্তুতি নিচ্ছি? নাচ গানের তালিম? কোনো কাজে আসবে না বোন। ধ্বংস হয়ে যাব। আফসোস করব দুনিয়াতে আবার এসে আমল করার জন্য, আল্লাহর হুকুম মেনে চলার জন্য, কিন্তু সেটা কেবলই আফসোস। দুনিয়াতে আর আসা সম্ভব না। এত অল্প সময়ের অশ্লীলতার ঘোর কেটে যাবে যখন মৃত্যু সামনে এসে দাঁড়াবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?সেই পর্যন্ত অপেক্ষার ফলাফল কি, তা কি এখনো বুঝতে পারছি না?

মৃত্যুর কোনো সময় নির্ধারিত নেই। যখন তখন মরণ হতে পারে। কালকে ভাল হবো এমন চিন্তা তো তারাই করবে যারা প্রকৃত মূর্খ।আর কত মানুষ তো এমনও চিন্তা করে রাখে যে, বয়স হলে পুরোপুরি ধর্ম মেনে চলবো! আহা! যদি একটু বুঝতো তারা! কবরে অনেক মানুষ এমন আছে যারা এমন ভেবেছিল তাদের কালকে আর আসেনি, বার্ধক্যও আসেনি। তার আগেই চলে গেল তওবা না করে।আল্লাহর নাফরমানির মধ্য দিয়ে। চিন্তা হয় না বোন? শুধু চিন্তা করলেই তো হবে না।তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসি ইনশাআল্লাহ!

(নাজনীন আক্তার হ্যাপির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

অবহেলা পেয়েও যারা বিশ্ব সাহিত্যের সেরা লেখক

সাকী মাহবুব : বিশ্ব সাহিত্যের এমন কিছু বরেণ্য তারকা লেখক, কবি,সাহিত্যিকগণ ছিলেন, প্রথম দিকে যাদের লেখা বই কোনো প্রকাশক বই আকারে প্রকাশ করতে চাইনি,কোন কোন পত্রিকায় তাদের লেখা ছাপাতে চায়নি কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকই পৃথিবীবাসী তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে।

বিশ্ব সাহিত্যে আজ ও যিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং নাট্যকার ও কবি,সাহিত্যের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব,তিনি উইলিয়াম শেকসপিয়র। উইলিয়াম শেকসপিয়ার সম্পর্কে ইংল্যান্ডের মনীষী টমাস কার্লাইলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধপূর্ণ উপনিবেশ ভারতবর্ষ এবং শেক্সপিয়ার এই দুটোর মধ্যে কোনটি নিতে চান? তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করেই বলেছিলেন — ভারত সাম্রাজ্য না থাকে না থাক,শেক্সপিয়ার ছেড়ে আমার কিছুতেই চলবে না। শেক্সপিয়ার সম্পর্কে আজ ও বিশ্বজনের অপূর্ব মূল্যায়ন এবং শ্রদ্ধা। কিন্তু মজার বিষয় হলো,সেক্সপিয়ার যতদিন জীবিত ছিলেন,ততদিন তার প্রতি এবং তার সাহিত্য কর্মের প্রতি কেউই মনোযোগ দেয়নি। এমনকি তার মৃত্যুর একশো বছর পরেও তার নাম ছিল প্রায় অজ্ঞাত। তারপর তার সম্পর্কে লাখো লাখো শব্দ রচিত হয়েছে। সেকালেও সেক্সপিয়ার সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানত। এমনকি তার সাহিত্য যখন প্রচুর জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে,তখন তার সম্পর্কে ছিল নানা ধরনের গুজব। আসলে হয়তো সেক্সপিয়ার বলে কোনো লোকই নেই। হয়তো অনেক লোক মিলে রচনা করেছেন এই চমৎকার নাটকগুলো। আবার কেউ কেউ বলেছেন, হয়তো প্রখ্যাত কবি ফ্রান্সিস বেকনই ছদ্মনামে লিখেছেন এই নাটকগুলো,নইলে অমন সুন্দর কথা সেক্সপিয়ার পাবেন কোথা থেকে? কিন্তু একদিন এই সন্দেহের কুয়াশা কেটে গেল,বিশ্ববাসী সত্যের রেটিনায় দেখলেন —সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এ সব অবিস্মরণীয় সাহিত্যকর্মেরর জন্মদাতা একজনই তিনি হলেন বিশ্ব সাহিত্যের তারকা পুরুষ উইলিয়াম সেক্সপিয়ার।

বিশ্বের সেরা কবিদের মধ্যে একজন ওয়াল্ট হুইটম্যান। লেখক হিসেবে তখন তিনি একেবারেই নবীন। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘লীভস অব গ্রাস’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৫ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের সময় একজন লেখকের যা হয় ওয়াল্ট হুইটম্যানের বেলায় ও তাই হয়েছিল। কী হয় কে জানে? যদি কেউ পড়তে না চায়? যদি সমালোচোকরা ভালো চোখে না দেখেন? যদি বিক্রি না হয়? বিশ্ব সাহিত্যের অহংকার হুইটম্যানের আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই ‘লীভস অব গ্রাস’ এর প্রথম প্রকাশের বেলাতেও ঘটল এমন ঘটনা। বইটির মোটেও কাটতি হল না। এক কপিও বিক্রি হল না। অবশেষে দুঃখে ভারাক্রান্ত, মর্মাহত, হুইটম্যান বইগুলো সমালোচক ও লেখকদের কাছে সৌজন্য কপি হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন। গ্রাহকেরা নিল না। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো পাঠক নিন্দিত বইটিই এক সময় হয়ে উঠলো নন্দিত। বইটির বৈশিষ্ট্য ছিল মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত। কিছুদিনেরর মধ্যেই বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে হয়।

জার্মান ভাষার খ্যাতিমান কবি ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পের জনপ্রিয় লেখক ফ্রানজ কাফকা বেচেঁ থাকা অবস্থায় তেমন মূল্যায়ন পাননি। তার বৈচিত্র্যময় সাহিত্যকর্ম ও তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি,পায়নি প্রশংসার খ্যাতি। বরং উল্টো তাকে নিয়ে হয়েছে তুখোর সমালোচনা,তার বিরুদ্ধে বয়ে গেছে মিথ্যার মিছিল। কাফকা একজন আইনজীবী হিসেবে দীক্ষা নিলেও লেখক হিসেবেই সময় ব্যয় করেছেন বেশী। কিন্তু দুঃখের কথা হলো তার ঘামঝরা লেখন শিল্প জন মানুষের সামনে আসেনি। নানা প্রতিকূলতা তাকে বাধা গ্রস্থ করেছে প্রতিটি পদে পদে। যক্ষ্ণা রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনের শেষবেলা কাটিয়েছেন বিছানায়। কাফকা তার বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে অনুরোধ করেছিলেন তার মৃত্যুর পর তার সাহিত্য কর্ম যেন আগুনে পুড়িয়ে ফেলানো হয়। কিন্তু ম্যাক্স ব্রড তা করেন নি। কিন্তু সুখের কথা হলো কাফকার মৃত্যুর পর পাঠক এবং সমালোচকরা তার ছোট গল্পের ভূয়শী প্রশংসা করেন। আজ তার সাহিত্যের মূল্যায়ন হয়,প্রশংসা হয়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তার আকাশ ছোঁয়া খ্যাতির ঢেউ।

কল্পবিজ্ঞানের রাজপুত্র জুল ভার্ন। বাবা ছিলেন আইনজীবী। তাই তার ইচ্ছে ছিল,তার ছেলেও খ্যাতিমান আইন ব্যবসায়ী হোক, দুপয়সা আয় করতে শিখুক, সুখে থাকবে। কিন্তু জুলভার্নের আইন পড়ার দিকে তেমন আগ্রহ ছিল না। আইন পড়ার চেয়ে তিনি মনোযোগী ছিলেন সাহিত্য চর্চায়। দিন রজনী সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন থাকলেও ভাগ্য সহজে,সুপ্রসন্ন হয়নি তার। তার প্রথম গ্রন্থ “বেলুনে পাচঁ সপ্তাহ“ এর পান্ডুলিপি নিয়ে শুরু হল প্রকাশকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরাঘুরি। কিন্তু কেউ তার এই উদ্ভট কাহিনী ছাপতে চাইলেন না। একে একে পনের জন প্রকাশকই ফিরিয়ে দিলেন তার পান্ডুলিপি। অত:পর প্রচন্ড অভিমানে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পান্ডুলিপিটি পুড়িয়ে ফেলতে ছুড়ে দিলেন জলন্ত আগুনে। কিন্তু রক্ষা করলেন তার প্রিয় স্ত্রী। স্ত্রী শান্তনার অভয় বাণী দিয়ে বললেন —- অন্তত আরেকজন প্রকাশককে দেখাও। অবশেষে স্ত্রীর কথাই সত্যি হলো। বইটি ষোলতম প্রকাশক ছাপতে রাজি হলেন। কিন্তু বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো অবিশ্বাস্য রকমের কাটতি। বইটি পেল বছরের বেস্ট সেলারের মর্যাদা। শুরু হলো অন্য ভাষায় অনুবাদ। আর জুলভার্নের সাহিত্যখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে,চারিদিকে।

ইংরেজী সাহিত্যের ঝড়তোলা লেখক,সবচেয়ে বেশী আলোচিত লেখক,সর্বাধিক গ্রন্থ প্রণেতা বলে খ্যাত চালর্স ডিকেন্স। চালর্স ডিকেন্স যখন প্রথম লেখা শুরু করলেন,তখন তার মনে ছিল হাজারো সংকোচ আর পাহাড় সম ভয়।তার ভয়ের কারণ,লোকে তাকেঁ ঠাট্টা,মশকরা করতে পারে।তাই প্রথম গল্পটা লেখার পর তিনি সবার অগোচরে,রাতের আঁধারে চুপিচুপি ডাকবাক্সে নিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছিলেন। তারপর গল্পটা যখন ছাপা হল,কি বাধঁভাঙা খুশি তার। আনন্দের বেদনায় একবারে কেদেঁ ফেলেছিলেন তিনি। শুরু করেছিলেন রাস্তায় নেমে পাগলের মতো ছুটাছুটি। অবশ্য এই লেখার জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক পাননি। এর পরের গল্পের জন্যও তিনি কিছু পাননি। প্রথম পারিশ্রমিক পান পাচঁ ডলার,একটি গল্প লিখে। পরের ঘটনা তো শুধুই ইতিহাস। ডিকেন্সের পান্ডুলিপি প্রতিটি শব্দের জন্য পারিশ্রমিক ধার্য হয়েছিল পনের ডলার করে। সর্বকালের সকল লেখকদের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

আমেরিকার মহিলা কবি এমিলি ডিকসন। নীরবে,একাধারে,দুহাতে লিখে গেছেন একের পর এক কবিতা। কিন্তু পত্রিকার জ্বলজ্বলে পাতায়,তার কবিতা ছাপা হোক এটা তিনি চেতেন না। বেচেঁ থাকা অবস্থায় এ গুণী মহিলার গুনে গুনে মাত্র সাতটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। প্রকাশকরা এ নারীর কাছ থেকে “মেয়েলিপনা” কবিতা প্রত্যাশা করেছিলেন কিন্তু এমিলি ডিকসন ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। যার কারণে অপ্রকাশিতই থেকে যায় তার কবিতার ধূসর পান্ডুলিপি। তার লেখা কবিতার সংখ্যা ছিল এক হাজার সাতশত-র মতো। লিখে গেছেন একাধারে কিন্তু সাহিত্য সমাজে তার কোন স্বীকৃতি মেলেনি। এমনকি বিয়েও করেন নি। ব্যক্তিগত জীবন ও তেমন একটা সুখের ছিল না। অবশেষে অজ্ঞা,আর অবহেলায় ভারী পাথর গলায় বেধেঁ জলে ডুবে আত্মহত্যা করেন। কবি মারা গেলেও তার প্রতিভা মারা যায়নি। চাপা থাকেনি তার ক্যারিয়ার। এমিলির মৃত্যুর পর তার বোন এমিলির লেখা অপ্রকাশিত কবিতার পান্ডুলিপির খোজঁ দেন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার কবি খ্যাতি। এখন আমেরিকার নারী কবি হিসেবে এমিলিকে সেরাদের মধ্যে অন্যতম বলেই মানা হয়।

বিশ্ব সাহিত্যের বিরাট আরেক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম জর্জ বার্নার্ডশ। দীর্ঘ নয় বছর সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। এই নয় বছরে লিখেছিলেন পাচঁ পাচঁটি বড় বড় উপন্যাস। তারপর তিনি তার এই লেখা পান্ডুলিপিগুলো পাঠিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড আর আমেরিকায় বড় বড় খ্যাতিমান প্রকাশকদের কাছে। কিন্তু সবখান থেকেই সে গুলো ফেরত এলো। কেউ তার বই প্রকাশ করে টাকা নষ্ট করত চাইলো না। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনিই হয়ে ছিলেন সর্বাধিক জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ১৯২৬ সালে পেয়েছিলেন সাহিত্যের বিশ্ব জোড়া স্বীকৃতি নোবেল পুরস্কার।

বাংলা সাহিত্যাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র কাজী নজরুল ইসলাম। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই কবির কবিতাও কোনো কোনো পত্রিকা তার লেখা প্রকাশ করতে অনীহা দেখিয়েছে,অবজ্ঞা আর অবহেলায় দূরে ঠেলে দিয়েছে এমন নির্মম বেদনাদায়ক ইতিহাস ও আছে। রোগে শোকে সুচিকিৎসাও হয়নি তার। অর্থের অভাবে,চিকিৎসার অভাবে আলঝেইমার নামক স্মৃতি ভোলা রোগে আক্রান্ত হয়ে থেমে যায় তার আগুনঝরা লেখনী। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার পর আর বেশীদিন বেচেঁ ছিলেন না। কিন্তু তার সাহিত্যকর্মই বলে দেয়

“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব

তবু আমারে দেব না ভুলিতে”

সুতরাং ভালো লেখার বা ভালো লেখকের মৃত্যু নেই।

ইউরোপের এনলাইটেনমেন্টে মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েলের প্রভাব

ibn tofailজোবায়ের আল মাহমুদ : ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর জন্যে মুসলিমদের প্রচুর অবদান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল ও তাঁর ছাত্র ইবনে রুশদের কথা বলতে পারি। বুদ্ধির সাহায্যে কিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তা নিয়ে ইবনে তোফায়েল একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, যার নাম হলো ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন যে, কোনো মানুষ যদি বনে-জঙ্গলে বাস করে, এবং তার কাছে যদি কোরআন-হাদিস বা কোনো ধর্মের বাণী না পৌঁছায়, তবুও সে তার যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহকে চিনতে পারবে।

ইবনে তোফায়েলের এ দার্শনিক উপন্যাসটি ইউরোপে এতো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এ গ্রন্থকে তাঁরা একটি তত্ত্ব আকারে হাজির করেছেন। তত্ত্বটির নাম হলো-‘ফিলোসফাস অটোডিডাকটাস’। ইউরোপের বিখ্যাত সব দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে হাঈ ইবনে ইয়াকজান। যেমন, থমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯), জন ওয়ালিস (১৬১৬-১৭০৩), জন লক (১৬৩২-১৭০৪), আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), গটফ্রিড লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬), জর্জ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩), ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬), ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪), শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) সহ আরো অনেকেই ইবনে তোফায়েলের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ইউরোপের সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই বইটি অনেক প্রভাব বিস্তার করে। যেমন, বইটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ডেনিয়েল ডেফো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো রচনা করেন।

১১০০ বা ১১১০ সালে ইবনে তোফায়েল স্পেনের গ্রানাডায় জন্মগ্রহণ করেন। আর ১১২৬ সালে ইবনে রুশদ স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করেন। ১১৬৩-১১৮৪ সাল পর্যন্ত ইবনে তোফায়েল মরক্কো ও স্পেনের সুলতান আবু ইয়াকুব ইউসুফের একজন মন্ত্রী ও চিকিত্সক হিসাবে কাজ করেন। এ সময়ে তিনি কবিতা, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে প্রচুর অবদান রাখেন। ১১৬০ বা ১১৭০ সালে ইবনে তোফায়েল ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ নামক বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেন। ১১৬৯ বা ১১৮২ সালে ইবনে তোফায়েল সুলতান আবু ইয়াকুব ইউছুফের দরবারে ইবনে রুশদকে আমন্ত্রণ করেন। এবং এরিস্টটলের বইগুলো ব্যাখ্যা করার জন্যে ইবনে রুশদকে অনুরোধ জানান। ইবনে রুশদ-এর বইগুলো ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। ১১৮৫ সালে ইবনে তোফায়েল মরক্কোতে মৃত্যু বরণ করেন। আর ১১৯৮ সালে ইবনে রুশদ মরক্কোতে মৃত্যু বরণ করেন।

১২৪১ সালে এরিস্টটলের উপরে লেখা ইবনে রুশদের বইগুলো তখন প্যারিসে পাওয়া যেত। তাই, বিজ্ঞানী ও খ্রিষ্টান পাদ্রী আলবার্টস ম্যাগনাস ইবনে রুশদের লেখা পড়ার জন্য ডোমিনিকান থেকে প্যারিসে আগমন করেন। এর কয়েক বছর পর তাঁর ছাত্র টমাস আকুইনাসও একই কারণে ইটালি থেকে প্যারিসে আগমন করেন। ১২৪৫ সালে টমাস আকুইনাস মুসলিম দার্শনিকদেরকে হুবহু অনুসরণ করতে থাকেন এবং তিনি ধর্ম ও দর্শনের সমন্বয় সৃষ্টি করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

১৩৪৯ সালে ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ প্রথম হিব্রু ভাষায় অনুবাদ হয়। অনুবাদ করেন ফ্রান্সের নার্বন শহরের দার্শনিক মুসা। এর কয়েক বছর পর, পিকো ডেলা মিরান্ডোলা ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’কে হিব্রু থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন। পিকো ডেলা মিরান্ডোলা ছিলেন ইউরোপীয় রেনেসাঁর অন্যতম দার্শনিক। ১৫১৬ সালে ব্রিটিশ দার্শনিক থমাস মুর একটি কাল্পনিক দ্বীপরাষ্ট্রের জন্যে আদর্শ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কেমন হবে,তা নিয়ে একটি বই লিখেন। বইটির নাম ‘ইউটোপিয়া’। এ বইটি ‘হাঈ ইবনের ইয়াকজান’ বইটি দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত ছিল। ১৬৫১ সালে হাঈ ইবনে ইয়াকজানকে হুবহু অনুসরণ করে স্প্যানিশ ভাষায় El Critic নামে একটি বই লিখা হয়। এখানে হাঈ এর চরিত্র নিয়েছে আন্দ্রেনিও নামক একজন। এই বইটি সম্পর্কে ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মান দার্শনিক শোপেনহাওয়ার বলেন যে,এখন পর্যন্ত যত বই লিখা হয়েছে,এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর একটি। ১৬৫১ সালে টমাস হবস এর লেভিয়াথন বইটি প্রকাশিত হয়। যদিও হাঈ ইবনে ইয়াকজানের প্রকৃতির রাজ্যের ধারণাটি হবস তার তত্ত্বে কাজে লাগিয়েছেন,কিন্তু এ বইটি ছিল খ্রিস্টানদের নাস্তিক হবার জন্য প্রাথমিক বই।

১৬৭১ সালে ল্যাটিন ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজানের দ্বিতীয় অনুবাদ করা হয়। এবার সরাসরি আরবি ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত ওরিয়েন্টালিস্ট এডওয়ার্ড পোকককে (Edward Pococke) ১৬৭৪ সালে ইংরেজি ভাষায় ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ অনুবাদ করা হয়। অনুবাদ করেন জর্জ কিথ (George Keith)।

১৬৭৮ সালে খ্রিস্টান ধর্মের কোয়াকার্স মতাবলম্বী স্কলার রবার্ট বার্কলে (Robert Barclay) তাঁর Apology বইয়ে ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’কে ইতিবাচকভাবে উল্লেখ করেন। ১৬৮১ সালে হাঈ ইবনে ইয়াকজানের হুবহু অনুকরণ করে স্প্যানিশ ভাষায় লিখা El Criticon বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ করা হয়। নাম – The Critick, one of the Best Wits of Spain। ১৬৮৬ সালে দ্বিতীয়বার ইংরেজি ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজানকে অনুবাদ করা হয়। অনুবাদ করেন বিখ্যাত দার্শনিক ও খ্রিস্টান পাদ্রী জর্জ  অ্যাশওয়েল (George Ashwell) ১৬৯৬ সালে হাঈ ইবনে ইয়াকজান অবলম্বনে স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত El CriticÓ¡n বইটি প্যারিস ও ফ্রান্স ভাষায় অনুবাদ হয়। ১৭০৮  সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি প্রফেসর সাইমন ওকলে ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। তাঁর অনুবাদটির নাম- ‘The Improvement of Human Reason: Exhibited in the Life of Hai EbnYokdhan’। এটি ছিল হাঈ ইবনে ইয়াকজানের তৃতীয় ইংরেজি অনুবাদ।

১৭১৯ সালে বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো রচিত হয় হুবহু ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ অবলম্বনে। পার্থক্য হলো, ইবনে তোফায়েল দর্শনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু ড্যানিয়েল ডিফো রবিনসন ক্রুসো লিখার সময়ে রাজনীতি ও অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ১৭২৬ সালে বিখ্যাত উপন্যাস ‘গ্যালিভার্স ট্রাভেলস’ রচনা করেন জোনাথন সুইফট। এটিও অনেকটা হাঈ ইবনে ইয়াকজানের মতোই। ১৭২৬- ১৭২৯ সাল পর্যন্ত ভলতেয়ার ইংল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন কিছুদিন। এ সময়ে তিনি জোনাথন সুইফট ও বিভিন্ন খ্রিস্টান ধর্মযাজকের বন্ধুত্ব গ্রহণ করেন। তখন খ্রিষ্টান ধর্মের কোয়াকার্স মতাবলম্বীরা তাঁকে ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর, ভলতেয়ারের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হয়। ইবনে তোফায়েলের সময়ে একজন বিখ্যাত আরব ইহুদি দার্শনিক ছিলেন, যার নাম ইবনে মাইমুন। তাঁর দর্শন সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেন জার্মান ইহুদি দার্শনিক মোজেস মেন্ডেলসন। ১৭৫৪ সঙ্গে মোজেস মেন্ডেলসন অন্য একজন জার্মান দার্শনিক লেসিং (Lessing)-এর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা উভয়ে ইউরোপের এনলাইটেনমেন্টের জন্যে অনেক অবদান রেখেছেন।

১৭৬২ সালে  জ্যাক রুশো তাঁর বিখ্যাত ‘On Education’ বইটি প্রকাশ করেন। এই বইয়ের মূল কথা হলো, শিশুরা প্রাকৃতিকভাবে ভালো হয়েই জন্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সমাজ তাকে খারাপ বানিয়ে ফেলে। তাই শিশুকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিলে সে ভালোই হবে। জ্যাক রুশোর এই ধারণার উপরে রাসূল (স)-এর একটি স্পষ্ট হাদিস রয়েছে। এবং হাঈ ইবনে ইয়াকজান তাঁর উপন্যাসেও তা দেখিয়েছেন। ১৭৬৩ সালে কান্ট স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে বই প্রকাশ করেন। ১৭৮১ – ১৭৯০ সালের মধ্যে কান্ট তাঁর বিখ্যাত তিনটি বই প্রকাশ করেন। ‘দি ক্রিটিক অব পিওর রিজন’ ১৭৮১ সালে, ‘দি ক্রিটিক অব প্র্যাকটিক্যাল রিজন’ ১৭৮৮ সালে, এবং ‘দি ক্রিটিক অব দি পাওয়ার অব জাজমেন্ট’ ১৭৯০ সালে। ১৭৮৪ সালে কান্ট তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ “এনলাইটেনমেন্ট কি”, তা প্রকাশ করেন। [Source: ‘The Vital Roots of European Enlightenment: Ibn Tufayl’s Influence on Mode Weste Thought’ by Samar Attar]

ইবনে তোফায়েলের ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’নামের এ মূল্যবান গ্রন্থটি ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা মুসলিমরা বইটির তেমন গুরুত্ব দেই না। যদিও সমপ্রতি বাংলা ভাষায় কাজী আখতারউদ্দিনের মাধ্যমে বইটি অনূদিত হয়েছে, কিন্তু ইউরোপের মতো বইটির ব্যাপক প্রচার ও প্রসার বাংলাদেশে হয়নি। অথচ, আমারদের বুদ্ধির বিকাশে, মুক্তচিন্তার উত্কর্ষ সাধনে এবং সত্যের সন্ধান পাবার জন্যে এমন একটি ধর্মীয় ও দার্শনিক গ্রন্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক : শিক্ষার্থী, উলুদাহ বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক

কোরআনের অনুবাদে সংশোধন করা…

পবিত্র কোরআনের অনুবাদে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা সরকারের কাজ নয় -সম্মিলিত মুফতি পরিষদ

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের ভুল সংশোধন করছেন। এ কাজ করার জন্য নাকি প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ডিজি সাহেব নিজে একজন জজ। কোরআন অনুবাদের যোগ্যতা বা ক্ষমতা তার নেই। তিনি কোনো আলেম, আরবী ভাষাবিদ বা অনুবাদক নন। তার সাথে কিছু সরকারী বেতনভোগী আলেম, তার অধিনে কর্মরত চাকুরীজিবী আলেম ও কিছু ‘জি হুজুর’ মার্কা দরবারী আলেম নিয়ে যদি তিনি কোরআনের অনুবাদ সংশোধন করেনও, তাহলে জাতি তা মেনে নেবে না।

হেফাজতে ইসলামের কিছু ভীরু ও লোভী নেতাকে সরকার নিরব করে দিলেও কোটি কোটি তৌহিদি জনতার মুখ সরকার বন্ধ করতে পারবে না। ডিজি বলেছেন, বাজারে প্রচলিত প্রায় শ’খানেক অনুবাদেই প্রচুর ভুল রয়েছে। হযরত থানভী রহ. এর অনুবাদ ২৭টি প্রকাশনী বাজারজাত করছে, এসবেও নাকি প্রচুর ভুল আছে। যুগ যুগ ধরে কোরআনের বঙ্গানুবাদ দেশে চললেও কোনো আলেমের চোখে এতো ভুল ধরা পড়লো না, আর ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল এতগুলি ভুল খুঁজে পেলেন, এটি সপ্তমাশ্চর্যের একটি হওয়া উচিত। তিনি তার পছন্দের কিছু আলেম নিয়ে পবিত্র কোরআন ঘাঁটাঘাঁটি করবেন, তাও আবার প্রচার দিচ্ছেন যে, এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। এ সংবাদে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। গতকাল এক বিবৃতিতে সম্মিলিত মুফতি পরিষদের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, যারা অনুবাদে ভুল খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের উচিত ভুলগুলি চিহ্নিত করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। এটি দেশের হাক্কানী আলেম সমাজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, তাদের ভুল ধরাটি ভুল না শুদ্ধ। যদি কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হয় তাহলে তা দেশের বড় ও প্রাচীন মাদরাসাগুলো থেকে দেওয়া আলেম প্রতিনিধিরাই করবেন। কোনো সরকারের দ্বারা প্রভাবিত বা শক্তির আজ্ঞাবহ দরবারী আলেম নয়। পাশাপাশি কেউ অহেতুক এসব অতিসংবেদনশীল ধর্মীয় কাজে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করছে কি না তাও ভেবে দেখার বিষয়।

৫ মে ২০১৩ পর থেকে ঈমানী বিষয়েও শীর্ষ হেফাজত নেতৃবৃন্দের রহস্যজনক নিরবতা জাতিকে এমনকি সারাদেশে হেফাজতের লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থককে চরম হতাশ করে। এমনকি সরকার সমর্থক আওয়ামী ওলামালীগের সমান প্রতিবাদও তারা গত ৫ বছর করার সাহস পাননি। তাদের এ ভীরুতা ও আপোষকামিতা এদেশের ইসলামী কার্যক্রমের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়। আর ধন-দৌলতের লোভে পড়ে যদি তারা ঈমানী বিষয়ে নিরব হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের বলবো, কবরের কথা স্মরণ করুণ ও আল্লাহকে ভয় করুন। তাদের সর্বশেষ ভ‚মিকা দেখে দেশবাসী এসব ইসলাম বিরোধী হস্তক্ষেপে ভয় পায়।

হেফাজত প্রতিবাদ করলে সরকার অনেক ভুল থেকে বিরত থাকতো, বর্তমানে যা নেই বললেই চলে। আমরা দেশের উলামা মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতাকে সতর্ক থাকার আহান জানাই। সরকারকেও বলি, দয়া করে নিজের সীমার বাইরে যাবেন না। পবিত্র কোরআন অনুবাদ ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব আপনাদের নয়। এজন্য যুগে যুগে বিশেষজ্ঞরা ছিলেন, বর্তমানেও আছেন। সরকারী উদ্যোগে অনুবাদ সংশোধন একটি মহাবিপর্যয়ের সূচনা করুক, আল্লাহর গজব ডেকে আনুক তা আমরা চাই না।

সাইবেরিয়ার উত্তরাংশে স্থাপিত হলো মসজিদ

mosque-ru-arkhanglesk 3

ভ্রমণ-গ্রন্থঃ তিব্বতে সওয়া বছর

tibet tour‘তিব্বতে সওয়া বছর বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক অংশে অনুবাদক মলয় চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন- ‘লেখকের অনুরাগী বন্ধু শ্রী জয়চন্দ্র বিদ্যালঙ্কারের মতে এটি হিন্দি সাহিত্যের প্রথম ভ্রমণ কাহিনী। …আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে,যখন তিব্বত ছিল এক নিষিদ্ধ দেশ,তখন পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন এক মহৎ সংকল্পে ব্রতী হয়ে,প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে গোপনে সে দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাঁর সেই নিষিদ্ধ যাত্রার বর্ণনা আজও আমাদের মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।’

রাহুল সাংকৃত্যায়ন শ্রীলংকায় ছিলেন ১৯২৭-২৮ সালের দিকে। অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা দুটোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। এর আগে ১৯২৬ সালে একবার তিনি লাদাখে কয়েকদিনের জন্য গিয়েছিলেন।

তিব্বতে যাওয়ার জন্য তিনি সোজা পথ ব্যবহার করেননি। সরকারি পাসপোর্ট-ভিসায় ঝামেলা হবে এটা জেনেই তিনি অবৈধভাবে নেপালে ঢুকে সেখান থেকে তিব্বতে যাওয়ার মনঃস্থ করেন। শিবরাত্রির সময়ে নেপালে প্রচুর তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। সেই সময়ে তাদের সাথে মিশে নেপালে প্রবেশের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। বই ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। ভ্রমণকালেও তিনি বইয়ের সঙ্গ ছাড়তেন না। সিংহল থেকে নেপালে আসার সময় তিনি সাথে করে যে পরিমাণ বই এনেছিলেন,তার মোট ওজন ছিল পাঁচ মণ। শিবরাত্রির অনুষ্ঠান হতে আরও কয়েক মাস বাকি আছে বলে তিনি এই ফাঁকে পশ্চিম ও উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান যেমন- ইলোরা,অজন্তা,কনৌজ কোশাম্বী,সারনাথ,নালন্দা,বৈশালী লুম্বিনী প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণ করেন।

তিনি স্বদেশি সংস্কৃতির মহত্ত্ব ও ঐশ্বর্য সম্পর্কে সচেতন;তাই বিদেশি সংস্কৃতির বিজ্ঞাপন ও আস্টম্ফালন যে তাঁকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম নয়,সে কথাই তার চিন্তা ও সমাজ বিশ্নেষণের প্রধান বিষয়।

ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়া নালন্দার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মনে হয়েছিল- ‘নালন্দা আমার rahul shankritayonস্বপ্ন,আমার প্রেরণা। এখানে কৃতবিদ্য মনীষী পি তদের চরণস্পর্শে পবিত্র হয়েছিল যে পথ,আমাকেও সেই পথেই তিব্বত যাত্রা করতে হবে।’

বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে নেপালবাসী ভারতীয়দের সে সময় সন্দেহের চোখে দেখত। তাই নেপালে প্রবেশ করে তিব্বতি ভোটদের ভাষা তিনি শিখে নেন এবং তাদের মতো পোশাক পরা শুরু করেন। তিব্বতিদের মতো স্নান করাও ছেড়ে দিয়েছিলেন।

নেপালে লুকিয়ে থেকে বন্ধুর পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে অনেক ক্লেশ স্বীকার করে তিনি তিব্বতে প্রবেশ করেন। তিব্বতের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজে নারীদের অবস্থান, ভিক্ষুজীবন, মঠের জীবনপ্রণালি, আহার-বিহার, বেশভূষা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর ‘তিব্বতে সওয়া বছর’ বইয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। চীন,ভুটান,নেপাল ও মঙ্গোলিয়ার সাথে তিব্বতের সম্পর্ক,তথা দ্বন্দ্ব,ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা তার অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির আড়ালে থাকেনি।

বিভাগ:ভ্রমণ

মোবাইল কি আপনার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করছে?

xiaomi-mi5s-plusযখন আমরা বিনামূল্যের কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করি আর সেটিতে নানা শর্তে সম্মতি দেই, তখন কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি যে, এসব অ্যাপ আমাদের সম্পর্কে কতটা তথ্য জানতে পারছে? কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় অনেক শর্ত আসে বা সম্মতি চাওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো না পড়েই সবাই ‘ওকে’ করে দেন। তার মানে সেই অ্যাপটিকে ফোনের অনেক তথ্যে প্রবেশাধিকার দেয়া হলো। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে আমরা কি কথা বলি বা কি বার্তা পাঠাই,পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর,মোবাইলের ছবি বা ভিডিও এমনকি আমাদের আর্থিক তথ্যও।

মূলত বিভিন্ন থার্ড পার্টি কোম্পানি এসব তথ্য ব্যবহার করে থাকে। হয়তো কোনো সামপ্রতিক মেডিকেল টেস্টের তথ্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে বিক্রি করা হয়,যা দেখে তারা এসব গ্রাহকের কাছে তাদের ওষুধের তথ্য পাঠাবে। অথবা সামপ্রতিক কোনো বিদেশ ভ্রমণের তথ্য চলে যাবে বিমান কোম্পানি বা ট্রাভেল কোম্পানির কাছে।

তথ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন,এরকম একজন ভারতীয় আইনজীবী ভাকুল শর্মা বলছেন,“এখন বিশ্বে কোনো কিছুই ফ্রি নেই। বিনামূল্যে এসব অ্যাপ ডাউনলোড করে আসলে আপনি আপনার নিজের,পরিবারের বা বন্ধুদের তথ্য বিনিময় করলেন।”

ভাকুল শর্মা বলছেন,“ফোনের এসব তথ্য নিয়ে বিভিন্ন অ্যাপ একেকজন ব্যক্তির ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করছে। যার ফলে তার পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য প্রস্তাব করা যায়।” বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি টাকার বিনিময়ে এসব অ্যাপ নির্মাতা কোম্পানি থেকে তথ্য কেনে। তারপর গ্রাহক অনুযায়ী,তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য অফার করা হয়।

ধরা যাক আপনি হয়তো ইলেকট্রনিক পণ্য পছন্দ করেন,তখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক কোম্পানির পক্ষ থেকে আপনার কাছে অফার আসবে। অথবা আপনি বেড়াতে ভালোবাসেন,তখন বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানি বা এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে নানা আকর্ষণীয় প্রস্তাব পেতে থাকবেন। ভাকুল শর্মা বলছেন,যখন আমরা মোবাইলে একা কাজ করি,ফেসবুক বা টুইটারে লিখি,তখন আসলে আমরা নিজেদের মতো করেই সেখানে কাজ করি। ফলে সেখানে প্রত্যেকের একেবারে নিজস্ব চরিত্রের ছাপ থেকে যায়। আর এর ফলে আমাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়ে যায় এসব অ্যাপস। আর ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এলগরিদমও ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ভারতের মতো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এখনো এসব ক্ষেত্রে তথ্য সুরক্ষার জন্য আইন তৈরি হয়নি। কেউ জানেনও না এসব তথ্য কোথায়,কার কাছে,কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভারতে এখন এ ধরনের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন করার দাবি উঠছে। অনেকে বলছেন,যেহেতু এসব কোম্পানি সাধারণ নাগরিকদের তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে,এসব টাকার ভাগ এই নাগরিকদেরও পাওয়া উচিত। তবে এর সবচেয়ে বড় সমাধান হলো,যখনই কোনো অ্যাপ ব্যবহার করা হবে,তখনই খুব ভালো করে দেখে নেয়া যে,সেটি ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে কতটা নাক গলাতে চায়। আপনি এসব অ্যাপকে আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কতটা অনুমতি দিতে চান,সেটাও আপনার ওপরই নির্ভর করছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রীতরাজ সিং বলছেন,“মোবাইল, অ্যাপ বা ইন্টারনেটে আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে যত কম তথ্য দেবেন,তত নিরাপদ থাকবেন। কারণ আমাদের কারো জানা নেই,আজ থেকে ১০/২০ বছর পরে এসব তথ্যের কি হবে।”

সূত্র: বিবিসি

মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালিমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই

shibir ridiculing 1আমাদের দেশের অধিকাংশ নির্লজ্জ ইসলামপন্থী দল ও ব্যক্তিত্ব তখন এবং এখনো মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে অক্ষম । সেটাকে এখনো তারা জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম হিসেবে দেখতে নারাজ বা অপারগ । এদের আবার কেউ কেউ মিথ্যা পাকিস্তানী প্রোপাগান্ডার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছে দিয়েছিলো ।

কেউ কেউ মৌখিক বা আন্তরিক প্রতিবাদের মধ্যে বিরোধিতা সীমাবদ্ধ রাখলেও জামাত-শিবির সশস্ত্র বিরোধিতা ও হত্যা-লুন্ঠন-ধর্ষণসহ যাবতীয় অপরাধে নিজেদের জড়িত করা ছাড়াও পাকিস্তানী সৈন্যদের সহায়তা করতে আল-বদর, আল—শামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেছে এবং ক্ষমাহীন অপরাধের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে । পাক সরকার ও এদের এদেশীয় দোসররা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর রাজন্যবর্গকে ভুল বুঝিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদানকে আটকে রেখেছিলো দীর্ঘদিন । তাদের নয়নের মনি বিভিন্ন ইসলামী ব্যক্তিত্ব (মওদূদী, ইউসুফ কারযাভী,আল-আজহারের গ্র্যান্ড মুফতি, প্রাক্তন সৌদী গ্র্যান্ড মুফতি বিন-বায, আব্দুল-আজিজ, প্রমুখ) কি অবস্থান নিয়েছিলেন আমাদের মুক্তযুদ্ধের ব্যাপারে? তাদের এখনকার বিভিন্ন প্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব যেমন-জাকির নায়েক, আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপ্স, প্রমুখদের দৃষ্টিভঙ্গী কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা গণহত্যা সম্পর্কে?? থলের বেড়াল তখন বেরিয়ে যাবে!

মৃতদের সংখ্যা নিয়ে জামাত-শিবির এখনো করে যাচ্ছে তামাশবাজি । ৩০ লক্ষ না হয়ে যদি ৩ লক্ষ, ৩০ হাজার, ৩ হাজার, ৩ শত এমনকি ৩ জন-ও হয়, তবু ঐসব নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হত্যার জন্য তারা দায়ী থাকবে । কিন্তু এসব ইসলামিষ্ট দাবীদারদের ঘিলুর মধ্যে বিন্দুমাত্র সে অপরাধবোধ নেই; বরঞ্চ আছে উত্তরোত্তর অহমিকা ও ঔদ্ধত্যপনা ।

দেশ স্বাধীনের পর এই কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র বন্ধ থাকেনি – “একাত্তুরে আমরা ভুল করিনি” জাতীয় তাদের অহংকারী তর্জন-গর্জন অব্যাহত থেকেছে এবং এখনো আছে । হত্যা-ধর্ষণ জাতীয় অপরাধ কর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুততপ নয় তারা । বিশেষ রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় আবার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে এখন মহীরূহে পরিণত হয়েছে । দীর্ঘদিন পর তাদের কিছু নেতাদের বিচার করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর পর-ও সেসব অপরাধীদের শহীদ হিসেবে উপস্থাপন করার উদগ্র উন্মাদনা চলছে অবিরাম । গত কয়েক বৎসর তারা নিজেরাই আসল  স্বাধীনতার ধারক-বাহক হিসেবে উপস্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে – মিটিং-মিছিল করছে ।

বিভিন্ন ইসলামী নামের ফেসবুক একাউন্ট খুলে সুচতুরভাবে প্রপাগান্ডা অব্যাহত রেখেছে । কোর’আন-হাদীসের বাণীগুলোকে নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে – মানুষজনকে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে । অধুনা তাদের নতুন কৌশল হচ্ছে, যুদ্ধের সময় সংঘটিত সমস্ত অপরাধগুলোর জন্য পাকিস্তানী শিয়াদের দায়ী করে নিজেদের ধোয়া তুলসীপাতা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করা । আমাদের এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং এসব ধর্মব্যবসায়ীদের আইনানুগ উপায়ে প্রতিহত করতে হবে ।shibir-independence-rally-samu

মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালিমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই

সাইফুল ইসলাম : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর হামলে পড়ার কারণে পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের সশস্ত্র সংগ্রামকে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বা সত্যিকারের জিহাদ বৈ অন্য কিছু বলা যাবে না।

সেদিন হানাদাররা চেয়েছিল অস্ত্রের জোরে জুলুম, নিপীড়ণ আর শোষণের ইতিহাসকে আরও দীর্ঘায়িত করতে এবং মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা বঞ্চিত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে।

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক গণহত্যা, জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা থাকলেও একই ধর্মের অনুসারী নিরীহ ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলে পড়ার ইতিহাস নেই বললেই চলে। পাকিস্তানিরা সেদিন চেয়েছিল নিজেদের দোসর ছাড়া সব মানুষকে খুন করে হলেও এ দেশের মাটির মালিকানা ধরে রাখতে।

অথচ আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি একজন মানুষকে হত্যা করল সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজন মানুষকে বাঁচাল সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল।

আশ্চর্যের বিষয়, এমন একটি শাসকগোষ্ঠী বর্বর হত্যাকাণ্ডটি পরিচালিত করেছিল, যারা কিনা মাত্র কয়েক বছর আগে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।

আমরা জানি, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই যেমন জিহাদ, তেমনই নিজেদের জানমাল ও ইজ্জত-আব্রু প্রতিষ্ঠার লড়াইও জিহাদ।

জিহাদের বিভিন্ন প্রকারভেদ থাকার পরও জানমাল, ইজ্জত-আব্রু রক্ষা এবং জালিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরাকে জিহাদের সর্বোচ্চ পর্যায় তথা মুখোমুখী লড়াই বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা।

তিনি বলেন, ‘আর তোমাদের কী হল যে তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।’

২৫ মার্চ কালরাতে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর হামলে পড়ে, তখন এখানকার মজলুম মানুষের কণ্ঠই যেন ওপরে উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলে রেখেছেন।

অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উত্তম জিহাদ হল জালিম শাসকের কাছে সত্যের বাণী তুলে ধরা। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভাষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নিজেদের হক তথা অধিকারের বিষয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের অবহিত করে আসছিল।

কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো জুলুম-নিপীড়নের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়িয়ে যাচ্ছিল জালিমরা। যার চূড়ান্ত পর্যায় ছিল রাতের আঁধারে নিজেদের ভাইবোনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া। তো জীবন বাঁচাতে, নিজেদের জানমাল রক্ষায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা অস্ত্রধারণ যে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সত্যিকারের জিহাদ, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

এ কারণেই তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের হালকা অস্ত্রের বিরুদ্ধে মাত্র ৯ মাস টিকতে পেরিছিল। আল্লাহ জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষে কীভাবে সাহায্য করেছেন, তা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা থেকে স্পষ্ট।

দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ থাকা, খাওয়া, আশ্রয়, এমনকি পথ দেখিয়ে, দিক-নির্দেশনা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এমনকি ইসলামিক রিপাবলিক (!)অব পাকিস্তান যখন তার মুসলিম ভাইদের হত্যায় মেতে উঠেছে, তখন প্রতিবেশী ভিন্নধর্মী মানুষদের দিয়ে আল্লাহ তাদের সাহায্য করিয়েছেন। মজলুমের পক্ষে আল্লাহ ভিন্ন জাতিকে এগিয়ে এনেছেন। এর থেকেই প্রমাণিত হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সত্যিকারের জিহাদ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন তার উম্মতের বেশিরভাগ মানুষ যেন বিভ্রান্তিতে না জড়ায়। মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের বৃহদাংশ থেকে শুরু করে (হাতেগোনা সুবিধাবাদী আলেম ও পাকিস্তান সরকারের চাটুকার দোসর কিছু মানুষ ছাড়া) সর্বস্তরের মানুষ এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

যারা সরাসরি যুদ্ধ করতে পেরেছেন তারা সেটি করেছেন। যারা পারেননি তারা জনমত তৈরি করে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। ফলে সম্মিলিত জনশক্তির কাছে দ্রুততম সময়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে জালিম পাকিস্তানিদের।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে সত্যিকারের জিহাদ ছিল তার আরেকটি প্রমাণ দেশের মূলধারার আলেমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় করণীয় প্রশ্নে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) বলেন, ‘পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করেছে, সুতরাং তারা জালেম। জুলুম আর ইসলাম এক হতে পারে না। তুমি যদি মুসলমান হও তবে পাকিস্তানের পক্ষে যাও কীভাবে? এটা তো জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ’। এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জুলুমের বিরুদ্ধে, গণহত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে সত্যিকারের জিহাদ। এ কারণে এ যুদ্ধে যারা সক্রীয় অংশগ্রহণ করেছেন, তারা মুজাহিদ।

যুগ যুগ ধরে সত্যের ও মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পথে যে সংগ্রাম চলবে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে চিহ্নিত হবে। কোরআন, হাদিসে রাসূল (সা.) ও আকাবেরে ওলামাদের অবস্থান তা-ই বলে।

আল্লাহ বলেছেন, জালিমের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। অর্থাৎ, জালিমের যত বড় সাহায্যকারীই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত, তারা জালিমের উপকারে আসতে পারবে না।

তাই তো আমরা দেখি, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা, চীন, এমনকি সৌদি আরবের মতো দেশ পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়ার পরও তারা জয়ী হতে তো পারেইনি, উল্টো দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশ্য আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে।

একটি বিষয় স্পষ্ট। ইসলাম, রাজনীতি, বৃহৎ সংহতি বা যে কোনো নামেই পাকিস্তানি জালিমদের পক্ষাবলম্বন ২৫ মার্চ কাল রাতের হামলার আগ পর্যন্ত হয়তো মেনে নেয়া যায়।

কিন্তু গণহত্যা, নির্বিচারে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, মা-বোনের ইজ্জত হরণ এবং ‘এ দেশের মানুষ নয়, মাটি চাই’- জেনারেল টিক্কা খান এমন হুমকি দিয়ে হত্যায় মেতে ওঠার পরও যারা তাদের সহায়তা করেছে, তারাও নিজেদের জালিমের কাতারে শামিল করেছে।

হামলার পর ফেসবুকে উল্লাস করে ওরা

shibir rejoice faruki murderঅধ্যাপক জাফর ইকবালকে হত্যাপ্রচেষ্টার পর খুশী ছিলো এবং আছে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইসলামপন্থী দল ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব । তাঁর প্রতি এদের ঘৃণা-বিদ্বেষ এমন চরম যে এজন্য তারা আইন-বর্হিভূত কর্মকান্ডকে সমর্থন করে – সেটা প্রকাশ্যভাবে না বললেও । একমাত্র জামাত-ই-ইসলামী গা বাঁচানোর জন্য দায়সারা গোছের বিবৃতি দিয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা অন্যান্যদের মতো চরম পন্থায় বিশ্বাসী । তাদের অতীত কর্মকান্ড তার প্রমাণ । বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র হলেও কারো অধিকার নেই ব্যক্তিগতভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তিপ্রদান করা ।

 

আক্রান্ত জাফর ইকবাল

হামলার পর ফেসবুকে উল্লাস করে ওরা

সাহাদাত হোসেন পরশ : ‘জাফর ইকবাল একজন নাস্তিক। তিনি আর যাই হোন না কেন, মুসলিম নন। আগেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তখন সফল হয়নি। এবার সফল হয়েছে। এবার মজা দেখ।’ জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম অপপ্রচারকারী চক্রকে শনাক্ত করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। নিবিড় তদন্ত করে জঘন্য ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এ চক্রের দুই সদস্যকে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে রমনা থানায়। এ ছাড়া কুৎসা ও নোংরা তথ্য ছড়ানোর ঘটনায় পুলিশের আবেদনের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ’ নামে একটি আইডি বন্ধ করে দিয়েছে।

joyous over zafor knivingগত ৩ মার্চ জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর পরই একটি গ্রুপ বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঘন্যভাবে ‘উল্লাস’ করতে থাকে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হামলা-সংক্রান্ত সংবাদের নিচে তার সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের পাশাপাশি ঘটনার অপব্যাখ্যাও দেয় এ চক্র। এদের কোনো কোনো স্ট্যাটাসের ভাষা ছিল ভীষণ অশ্নীল। কয়েকটি স্ট্যাটাসের জন্য আবার নোংরা ছবিও শেয়ার করা হয়েছিল। এই অপপ্রচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে- শুধু জাফর ইকবাল নন, রাষ্ট্রের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবিকে টার্গেট করে চক্রটি সুপরিকল্পিতভাবে সাইবার জগতে চালাচ্ছে বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচার। চক্রটি ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং পহেলা বৈশাখ নিয়েও নানা ব্যঙ্গাত্মক ছবি,স্ট্যাটাস ও কমেন্ট পোস্ট করছে- যা জাতীয় চেতনার পরিপন্থী। কিছু আইডি থেকে বিশিষ্টজনকে গালমন্দও করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান সমকালকে বলেন, যারা অনলাইনে বিশিষ্টজন ও জাতীয় দিবসকে টার্গেট করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করছে, তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ চক্রের অন্যদের খোঁজা হচ্ছে। বিভিন্ন আইডি শনাক্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গি হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশ কয়েকটি আইডি থেকে হামলাকে সমর্থন করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত শুরুর পর বেরিয়ে আসে, ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ’ নামে একটি ফেসবুক ও টুইটার আইডি থেকে জাফর ইকবালকে নিয়ে অতিমাত্রায় বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা ছড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু ফেসবুক ও টুইটার আইডি থেকে আনন্দ প্রকাশ করা হয়েছে।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, খালিদ বিন ওয়ালিদ নামে আইডি পরিচালনা করেছে মূলত হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বিরামচরের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন খান। এই আইডির প্রোফাইল ছবি ছিল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকা। ইকবাল এক সময় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। তবে মাঝেমধ্যে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি হারায় সে। এরপর থেকে সে নিয়মিত বেনামি আইডি থেকে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন লেখা পোস্ট করত। জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন বিশিষ্টজনের নামেও মিথ্যাচার করে আসছিল সে।

গত ১৩ মার্চ সহকারী পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম হবিগঞ্জ থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। তার সূত্র ধরে কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মাদ্রাসা শিক্ষক আলামিন রুমীকে। এই মাদ্রাসা শিক্ষকও নামে-বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে জাফর ইকবালসহ অন্যান্য বিশিষ্টজন সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিত।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সিলেট থেকে গ্রেফতার ইকবালের জঙ্গিদের ব্যবহূত টেলিগ্রাম অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট ছিল। অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা করা হয়, এমন ২৩টি অখ্যাত নিউজ চ্যানেলের সাবস্ট্ক্রাইবার সে। তার একাধিক বেনামি আইডিতে আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা জসীমুদ্দিন রাহমানির বিভিন্ন লেখা পাওয়া গেছে। ইকবাল গ্রেফতারের পর থেকে তার ভাগ্নে রাজীব গা ঢাকা দিয়েছে। রাজীবও বিভিন্ন বেনামি আইডি থেকে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করে আসছিল বলে জানান গোয়েন্দারা।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রুমীর একটি পোস্ট ছিল এমন- ‘ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে।’

ইকবাল একটি পোস্ট শেয়ার করেছে, যাতে লেখা হয়েছে- ‘জাফর ইকবাল একজন সু-লেখক হতে পারেন, কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে তিনি একেবারেই অন্তঃসারশূন্য। ধর্মীয় কোনও বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনও উপদেশ গ্রহণ করা আর একটা অন্ধকে পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করা একই কথা।’ একটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, ‘জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক ছিল’। আরেকটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, ‘বাংলার মুক্তমনাদের জানাতে চাচ্ছি, আপনারাই বলেন, বাংলার একটা অভিজিৎ রায় মারলে হাজার অভিজিৎ রায় জন্ম নেবে। এক জাফর ইকবাল হত্যা করলে হাজার হাজার জাফর ইকবাল জন্ম নেবে। তা হলে আপনারাই এদের হত্যা করে এ দেশ নাস্তিকময় করে তুলুন।’ ‘মুরসালিন এসকে’ নামের একটি আইডি থেকে মন্তব্য করা হয়, ‘মুজাহিদিনরা এদেরই টার্গেট করে’।

জঙ্গি-সংক্রান্ত খোঁজ রাখেন পুলিশের এমন এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, যারা উগ্রপন্থি তারা নানা গ্রুপে কাজ করে। কেউ দায়িত্ব পালন করে অপারেশনাল ইউনিটে। কেউ আধ্যাত্মিক বয়ান দেয়। কেউ আবার ‘মিডিয়া টিমে’র সদস্য হয়ে জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে। যারা মিডিয়া টিমে রয়েছে তাদের দায়িত্ব থাকে, টার্গেট করা ব্যক্তি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা। এ ছাড়া এ দলের সদস্যরা জঙ্গি অপারেশন হলে সেটাকে সমর্থন করে পোস্ট দিয়ে থাকে। এ দলভুক্ত সদস্যদের কৌশল থাকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ার পর তথ্য না দেওয়ার কৌশল হিসেবে নিজেদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা নানা ধরনের ওষুধ চেয়ে থাকে- যেগুলো মূলত চেতনানাশক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ দেওয়া হলেই বিপদে পড়তে হয় এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদও থেমে যায়।

সিভিল এভিয়েশনের নজরদারি না থাকায় দুর্ঘটনা

us-bangla dashআজাদ সুলায়মান ॥ দেশের ফ্লাইং ক্লাবগুলোর অব্যবস্থা ও স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত দিচ্ছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। সিভিল এভিয়েশনের সর্বক্ষণিক নজরদারি না থাকা ও সেফটি ইস্যুতে শিথিলতার দরুন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। তাদের মতে-আইকাও এবং সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম মেনে চলছেনা এসব ফ্লাইং ক্লাব। বিশেষ করে নারী পাইলটদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে যতটুকু সতর্কতামূূলক পদক্ষেপ নেয়া বাধ্যতামূলক, সেটা মানা হয়নি বলেই নারী পাইলটদের হাতেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছেন নারী পাইলটরাই। ক্যাপ্টেন রোখসানা, জাকিয়া সুলতানা চমন, ডলি, ফারিয়া লারা, তামান্না ও পৃথুলা। অদক্ষ প্রশিক্ষকের সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজে প্রশিক্ষণে বাধ্য করায় অধিকাংশ নারী পাইলটকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

সিভিল এভিয়েশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জেনারেল এভিয়েশন সেক্টরে এ যাবত যত দুর্ঘটনা ঘটেছে- সবকটিরই তদন্তে ফ্লাইং ক্লাবগুলোর অবহেলা ও সঠিক পরিকল্পনাকে দায়ী করা হয়েছে। সর্বশেষ রাজশাহীতে যে দুর্ঘটনায় প্রশিক্ষণার্থী তামান্না ও প্রশিক্ষক শাহেদ কামাল নিহত হন- সেটার তদন্তেও ফ্লাইং ক্লাবের সঠিক পরিকল্পনা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও ব্যবস্থাপনার সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভর দুপুরে যে সময়টাতে নিহতদ্বয়ের বিশ্রামে থাকার কথা সে সময়ে তারা ফ্লাইং করতে যান। প্রশিক্ষক শাহেদ কামাল একজন দক্ষ পাইলট হলেও তিনি মানসিকভাবে কিছুটা চাপের মুখে ছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্ত চলায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। তারপরও তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই ফ্লাইটে পাঠানো হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই দুর্ঘটনার কদিন আগেই তিনি ইজি ফ্লাই নামের একটি কার্গো কোম্পানিতে যোগ দেন। এ অবস্থায় মাত্র চার দিনের জন্য তামান্নাসহ আরও ১০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে ‘সলো ট্রেনিং’ করানোর জন্য তিনি রাজশাহী যান। মাত্র চারদিনেই এত সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীকে সলো (এককভাবে ফ্লাই করানো) করানোর কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বেশ অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। যে কারণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তিনি সেদিন দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, সে সময় শাহেদের বিরুদ্ধে একটি ঘটনার তদন্ত চলছিল। এমনিতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এমন অবস্থায় তাকে রাজশাহীতে গিয়ে ১০ জনকে সলো করানোর মতো কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি।

এ প্রসঙ্গে যমুনা নদীতে পড়ে প্রাণ হারানো অপর পাইলট কামরুল ইসলাম সম্পর্কেও সিভিল এভিয়েশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,‘তার কোন ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং প্র্যাকটিস ছিলনা। কারণ সে সময়ে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে ফুলটাইম ইন্সট্রাক্টর ছিলনা। এতে সর্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি প্র্যাকটিস করানো হত না। কামরুল নিজেও এ প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হন। তার যদি এ ট্রেনিং থাকত তাহলে- তিনি বেশ নিরাপদেই যমুনার চরে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করতে পারতেন। ওই ঘটনায় তিনি প্রাণ হারালেও তার সহযোগী পাইলট শামসুদ্দিন ভাগ্যজোরে প্রাণে রক্ষা পান । এখন তিনি একটি বেসরকারী এয়ারলাইন্সে কর্মরত। এ বিষয়ে একজন পাইলট জানান, কোন ধরনের ইন্সট্রাক্টর ছাড়া দুজন পাইলটকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে রাজশাহী পাঠানো আদৌ ঠিক হয়নি। যদিও দুজনেরই পিপিএল ( প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স) ছিল, তবুও তাদের কাছে এ ধরনের ফ্লাইং ঝুঁকিপূর্ণই ছিল । সে সময়েও বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে কোন ফুলটাইম ইন্সট্রাক্টর ছিলনা।

এ সব দুর্ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব একাডেমির বেশ কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে ওঠে। তদন্তকারীরা অবাক হয়েছেন- দেশের প্রধান ও প্রথম এই একাডেমির প্রধান চীফ ইঞ্জিনিয়ার রুমির কোন এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোন ডিগ্রী নেই। উপরন্তু মাত্র অষ্টম শ্রেণী পাস এই চীফ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একটি ডিপ্লোমা সনদ দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করতে করতে সনাতনী কায়দায় কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জনই তার মূল যোগ্যতা। এহেন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির ওপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছে ফ্লাইং ক্লাবের এতগুলো প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো গুরুদায়িত্ব। এটা তদন্তকারীদের কাছেও অবিশ্বাস্য ঠেকেছে।

সিভিল এভিয়েশন জানায়, অন্যান্য ফ্লাইং ক্লাবগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় যেখানে, আইকাও ও সিভিল এভিয়েশনের নিয়মনীতি ও শর্তাদি পদে পদে লঙ্ঘন হচ্ছে। সম্প্রতি সিভিল এভিয়েশনের একটি টিম পরিদর্শনের সময় দেখতে পায় গ্যালাক্সি ফ্লাইং ক্লাব নামের একটি প্রতিষ্ঠানে গত কয়েক মাস ধরে কোন প্রশিক্ষকই নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী নজরুলের স্বেচ্ছাচারিতা, নানা অরাজকতা ও অনিয়মের প্রতিবাদে পর পর ইস্তফা দেন চীফ অব ইন্সট্রাক্টটর (সিজিআই), চীফ ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর (সিএফআই) ও হেড অফ ট্রেনিং (এইচটি)। আজও এ সব পদ শূন্য রেখেই একাডেমির কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে চালানো হচ্ছে। অথচ আইকাও এবং সিভিল এভিয়েশনের রুলস হচ্ছে এ ধরনের পদ শূন্য রেখে কিছুতেই উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের কাজ চালানো যায়না। এটা বিপজ্জনক। এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রেখে প্রশিক্ষণ দেয়াটা প্রশিক্ষকের জন্যও নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে-প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ যেভাবে আলু-পটলের ব্যবসার মতো গায়ের জোরে ফ্লাইং ব্যবসা করছেন- তাতে খেসারত দিতে হচ্ছে যমুনা নদীতে পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কামরুল ইসলামের মতো পাইলটকে।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের ফ্লাইং ক্লাবগুলোকে প্রশিক্ষণের বিষয়ে আরও সতর্ক ও পেশাদারি হতে হবে। এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে-প্রশিক্ষণ বিমানে ফ্লাইং করার সময়ে ককপিটে বসে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী দুজনেই সেলফি তোলার মতো কৌতূহলী কাজেও ব্যস্ত থেকেছে। যেখানে তাদের এক মুহূর্তের অন্যমনস্কতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে তাদেরকে ককপিটে বসে মোবাইল ফোনে সেলফি তোলার মতো ছেলেমিপনা কতোটা ভয়ঙ্কর তা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে না পারে তাহলে এর চেয়ে আর দুর্ভাগ্য কি হতে পারে।

তিনি সিভিল এভিয়েশনকে এ সেক্টরে আরও বেশি মনোযোগী ও তদারকি বাড়ানোর পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হলে ফ্লাইং ক্লাবগুলোকে তাদের মতো করে পলিসি তৈরি করলে চলবে না। সরকারী বেসরকারী সব ধরনের ফ্লাইং ক্লাবকেই আইকাও ও সিভিল এভিয়েশনের সব শর্ত ও নিয়ম মেনে চলতে হবে।