আলেপ্পোতে সাম্প্রতিক বোমা বর্ষণ নিয়ে রাশিয়ার বক্তব্য
সিরিয়ায় শান্তি আনা ‘অসম্ভব ব্যাপার’: জাতিসংঘে রাশিয়া
আলেপ্পোর যুদ্ধবিরতিকে অপব্যবহার করবেন না: রাশিয়ার হুঁশিয়ারি
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সতর্ক করে বলেছেন, সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের যুদ্ধবিরতিকে সন্ত্রাসীরা যেন অপব্যবহার না করে। তিনি আরো বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সুযোগকে যদি সন্ত্রাসীরা শহরে তাদের চলাচলের জন্য ব্যবহার করবে না বলে আশ্বাস দেয়া হয় তাহলে তার দেশ আলেপ্পো শহরে যুদ্ধবিরতির পরিধি তিন ঘণ্টা থেকে বাড়াতে পারে।
ল্যাভরভ সোমবার বলেন, আগের যুদ্ধবিরতিতে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র মজুদ জোরদার করেছিল এবং রাশিয়া এখন উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, সন্ত্রাসীরা যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে আলেপ্পোয় আরো নতুন সন্ত্রাসী পাঠাবে। তিনি আরো বলেন, আলেপ্পোয় যুদ্ধবিরতি বাড়াতে হলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়টি মীমাংসিত হতে হবে।
মস্কো সফররত জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ারের সঙ্গে বৈঠকের পর ল্যাভরভ সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। অবশ্য, তিনি এ কথাও স্বীকার করেন যে, আলেপ্পোয় প্রতিদিন তিন ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি দেয়া মানবিক ত্রাণের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “এটি প্রধান ইস্যু নয় যে, আলেপ্পোর মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে চায় না কেউ বরং আসল বিষয় হচ্ছে যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে যেন সন্ত্রাসীরা আবার সংগঠিত হওয়ার সুযোগ না পায় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ গড়ে না তোলে।”
গত কিছুদিন আগে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে দেশটির সামরিক বাহিনী উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেছে। এতে রাশিয়া সরাসরি বিমান সহযোগিতা দিচ্ছে; পাশাপাশি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সিরিয়ার বাহিনীকে সামরিক পরামর্শ দিয়ে চলেছে।
এবার পুতিনের অভিযোগ: ‘যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসীরা পুনর্গঠিত হচ্ছে‘
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সিরিয়ায় সহিংসতায় লিপ্ত উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে পুনর্গঠিত হচ্ছে; সন্ত্রাসীরা এ যুদ্ধবিরতির অপব্যবহার করছে। কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে পুতিন সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, সিরিয়ার উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও কথিত উদারপন্থিদেরকে আলাদা করতে পারে নি আমেরিকা। কারণ আমেরিকা নিজেই এদেরকে নিয়ে জটিলতা মোকাবেলা করছে।
রুশ নেতা বলেন, আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে তাতে মস্কো তার অংশ ঠিকমতোই পালন করছে। রাশিয়ার দায়িত্ব ছিল সিরিয়ার সেনাদের জন্য যুদ্ধবিরতি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা। মস্কো সে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে আশা করেন, আমেরিকাও একইভাবে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পালন করবে। পুতিন বলেন, সিরিয়ার যুদ্ধবিরতির ভেতরে ওয়াশিংটন ও মস্কোর অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে।
পুতিন বলেন, “আমাদের একে অপরের কাছে সৎ ও স্বচ্ছ হতে হবে কিন্তু আমি বুঝতে পারি না কেন আমাদেরকে যে কোনো চুক্তি গোপন করতে হবে।” জাতিসংঘে সিরিয়ার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আমেরিকা প্রকাশ করতে রাজি না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে পুতিন এ কথা বলেন।
গত সোমবার থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কর্যকর হয়েছে। তবে রাশিয়া বার বার বলে আসছে– আমেরিকা যদি উগ্র সন্ত্রাসীদের থেকে কথিত উদারপন্থিদের আলাদা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে মার্কিন সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর বিমান হামলা শুরু করবে রাশিয়া। সূত্রঃ পার্স টুডে, ২০১৬–০৯–১৭
সিরিয়া–যুদ্ধ মার্কিন–সৌদি–কাতারি খেলা: ফি.টাইমস
কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামাদ বিন জাসেম বলেছেন, সিরিয়ায় যা ঘটছে তা গণ–বিপ্লব নয়, বরং মার্কিন, সৌদি ও দোহা–সরকারই সিরিয়ার ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, আর আমার শাসনামলেই তা শুরু হয়েছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। জাসেম এই পত্রিকার সাংবাদিককে বলেন, আমি এমন কিছু কথা বলতে চাই যা এ পর্যন্ত কেউ বলেনি। জাসেম ২০১২ সালে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে যখন সিরিয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করি তখন নিশ্চিত ছিলাম যে খুব শিগগিরই কাতার সিরিয়ার পরিস্থিতির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ, সৌদি সরকার তখনও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু পরে সৌদি সরকার নীতি পরিবর্তন করে এবং সিরিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ইস্যুটি রিয়াদ ও দোহার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে পরিণত হয়।’ জাসেম সিরিয়া–সংকটকে ‘একটি আন্তর্জাতিক খেলা’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, মার্কিন, সৌদি ও কাতারের সরকার এই খেলার শরিক এবং রিয়াদই এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
তিনি এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোলান দুমা’র একটি বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে দুমা বলেছিলেন ‘আরব–বসন্ত’ শুরুর দুই বছর আগেই ব্রিটেন সিরিয়ায় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং সিরিয়ার সংকটটি আসলে একটি ষড়যন্ত্রেরই ফসল। আর এই কথিত বসন্তের সময় কাতারও লিবিয়া, মিশর ও ইয়েমেনে ষড়যন্ত্রের একটানা প্রচেষ্টায় জড়িত ছিল বলে জাসেম স্বীকার করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এইসব বক্তব্য সিরিয়ায় ষড়যন্ত্রকারী ও হস্তক্ষেপকামী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কাজে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সিরিয়ার আসাদ সরকার আরব সরকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্বাধীনচেতা ও কট্টর ইসরাইল–বিরোধী হওয়ায় এই সরকার পাশ্চাত্য এবং তাদের স্থানীয় সেবাদাস সরকারগুলোর জন্য চক্ষুশূল হয়েছিল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় সৌদি সরকারের ভূমিকা প্রকাশ করার জন্য মার্কিন সরকারের ওপর যখন দেশটির নানা মহলের চাপ বাড়ছে তখন সিরিয়া সংকটের পেছনে পাশ্চাত্য ও তাদের কয়েকটি ক্রীড়নক সরকারের যৌথ–ষড়যন্ত্রের খবর ফাঁস হল। অনেকেই বলছেন, মার্কিন সরকার হয়তো সৌদি আরবের বিষয়ে কোনো নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়।
সূত্রঃ পার্স টুডে, ২০১৬–০৪–২৬